শুক্রবার, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৩৮ পূর্বাহ্ন

শিরোনাম :
সাপ্তাহিক সাহসী সময়ের ২৬তম বর্ষে পদার্পনে সকলকে প্রাণঢালা শুভেচ্ছা বীরত্বের এক অবিস্মরণীয় গৌরবময় দিন ৫৩তম মহান বিজয় দিবস আজ নিপাহ ভাইরাস প্রতিরোধে খেজুরের কাঁচা রস পান না করার জন্য আহবান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিজয় দিবস উপলক্ষে রাজবাড়ী জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন কর্মসূচি রাজবাড়ীতে হারানো ৩৫টি মোবাইল উদ্ধার করে মালিকদের কাছে হস্তান্তর করল পুলিশ রাজবাড়ীতে গত ২৪ ঘন্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ২৫ জন হাসপাতালে ভর্তি কালুখালী উপজেলার হোগলাডাঙ্গী মাদ্রাসা থেকে দাখিল-আলিম পরীক্ষার কেন্দ্র স্থানান্তরে ১১টি মাদ্রাসার শিক্ষা কার্যক্রম অনিশ্চয়তার পথে গোয়ালন্দ উপজেলার ছোট ভাকলায় ভ্যান উল্টে গভীর গর্তে পড়ে মসলা বিক্রেতা নিহত রাজবাড়ীতে সাহিত্যে বঙ্গবন্ধু শীর্ষক বিশেষ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন ডিজিটাল যোগাযোগ ভারত-বাংলাদেশ অংশীদারিত্বের উদীয়মান ক্ষেত্র ঃ ভার্মা
ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন প্রেক্ষিত চন্দনী ইউনিয়ন

ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন প্রেক্ষিত চন্দনী ইউনিয়ন

 শেখ এন হোসাইন  সভ্যতা এবং প্রগতির পথে হাঁটি হাঁটি পা পা করে এগিয়ে চলেছে আমাদের প্রাণপ্রিয় চন্দনী ইউনিয়ন। কালের অমোঘ পরিক্রমায় অতীত হয়ে গেছে অনেকগুলো বছর। অনেক শিশু-কিশোরেরা এখন ভোটার হয়েছে। প্রকৃতিতেও অনেক পরিবর্তন হয়েছে। এখনকার মতো এত বাড়ী-ঘর ছিল না। রাস্তা-ঘাট, বড় বড় গাছ আমরা ছোট সময় যেগুলো দেখেছি সেগুলো এখন নেই। প্রকৃতি, আকাশ সবকিছুর সাথেই আমাদের মিতালী ছিল। সেগুলো এখন শুধুই স্মৃতি। কোথায় যেন হারিয়ে গেল আমার সেই নানান রঙের দিনগুলি। সংসারের ব্যস্ততার মাঝে যখনই একটু নিরিবিলি একাকী হই, তখনই আমার শিশু-কিশোর বেলার স্মৃতি হাতড়িয়ে এক অজানা সুখ অনুভব করি। স্মৃতি রোমন্থন করে ডুবে যাই আমার সেই শিশু-কিশোর বেলায়। মানুষ, গাছ-গাছালি, রাস্তা-ঘাট আর প্রকৃতির সাথে মিলেমিশে একাকার হয়ে সেই ফজরের আজানের ভোরে একাকী পায়ে হেঁটে তিন-সাড়ে তিন মাইল আঁকা-বাঁকা পথ পেরিয়ে কাঁচা রাস্তায়, ভাঙ্গা রাস্তায় হোঁচট খেয়ে পড়ে গিয়ে আবার উঠে প্রাইভেট পড়ার জন্য পূর্ণ উদ্যমে চলে যেতাম খোশ বাড়ী ‘আরব আলী’ স্যারের বাড়ী। এখন দশ টাকা দিয়ে দশ মিনিটেই চলে যাওয়া যায়। প্রতিদিনের এই আসা-যাওয়ার ব্যত্যয় ঘটতো না। জুকাই যাওয়ার পথে হড়াই ব্রীজে সাঁকো ছিল। ভীত-বিহ্বল অবস্থায় পার হতাম।

৭৫’ পরবর্তী নির্বাচনের কথাগুলো কিছু কিছু মনে পড়ে। যতদূর মনে পড়ে সাধারণতঃ শীতের দিনে নির্বাচন হতো। কী যে হৈ চৈ চেঁচামেচি আর মিছিল-মিটিংয়ের মধ্যে নির্বাচন এগিয়ে আসতো। অত্যন্ত আনন্দঘন পরিবেশে নির্বাচন হতো। আখ মাড়াইয়ের ‘খোলা’য় বসে আড্ডা মারা, রাস্তা-ঘাট, হাট-বাজারে আলোচনা-সমালোচনায় মানুষ তার পছন্দের চেয়ারম্যান-মেম্বারদের জন্য ভোট প্রার্থনা করতো। চন্দনী ইউনিয়নের এক প্রান্তে এবং খানগঞ্জের কাছাকাছি আমাদের বাড়ী থাকার সুবাদে খানগঞ্জের চেয়ারম্যানকেই আমাদের চেয়ারম্যান মনে করতাম। খোর্দ্দদাদপুর স্কুলে তখন ক্লাস টু থ্রি ফোরে পড়ি। বন্ধু-বান্ধব সবই ছিল খানগঞ্জের।

যাক সেসব কথা। আমাদের চন্দনী ইউনিয়নের সবগুলো রাস্তাই ছিল কাঁচা। সময়ের পরিক্রমায় এখন সবগুলো রাস্তাই কংক্রিটের হয়েছে। জনজীবন সচল হয়েছে। মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে। সামাজিক-সাংস্কৃতিক এবং রুচির পরিবর্তন হয়েছে সাধারণ মানুষের। শুধুমাত্র কৃষিভিত্তিক অর্থনীতির উপর নির্ভরতা কমিয়ে বিভিন্ন পেশা বেছে নিয়েছে। মানুষের মুখে হাসি ফুটেছে। শিক্ষা-দীক্ষায়ও প্রভূত উন্নতি সাধিত হয়েছে।

কিশোর বয়স থেকে আব্বার অনুরোধে কুষ্টিয়ায় পড়াশোনার কারণে এলাকার লোকজনের মধ্যে খুব একটা পরিচিত হতে পারি নাই। ইউনিয়নের লোকদের চাইতে কুষ্টিয়াতে বন্ধু-বান্ধব এবং পরিচিত জন বেশী গড়ে ওঠে। যাই হোক আব্বার কিছু জমি-জমা থাকার বদৌলতে ৭৫ পরবর্তী দুর্ভিক্ষ কী জিনিস খুব একটা বুঝতে পারিনি। তবে মানুষের অভাব দেখেছি সেই শিশু-কিশোর বয়সেই। কথায় বলে, ‘ভরা পেটে কী ক্ষুধার জ্বালা বোঝা যায়’। তাই আমিও কিশোর বয়সে সেটা বুঝতাম না। পর পর কয়েক বছর বন্যা হতো। মানুষের ফসল তলিয়ে যেত বন্যার পানিতে। মানুষ নৌকা নিয়ে তাড়াহুড়ো করে ধান কাটতো। নৌকায় আধা পাকা ভেজা ধানের ঘ্রাণ আর নৌকায় লাগানো আলকাতরার গন্ধের সেই মাদকতায় আমি এখনো কল্পনায় হারিয়ে যাই আমার সেই ছেলেবেলার মধুর স্মৃতিময় দিনগুলির মধ্যে। আজও মনে পড়ে আমাদের বেশ বড় একটা নৌকা ছিল, যেটা পুকুরে ডোবানো থাকতো। সেটা নিয়ে খালিয়াবাড়ী, চৌবাড়ীয়া, দুর্গাপুর এবং আমাদের বাড়ীর সামনের মাঠে কতো যে নৌকা বাইচ দিয়েছি আর কতো যে আনন্দ করেছি সেটা আজকের ছেলেমেয়েদের কাছে অভাবনীয়, অকল্পনীয়। ওদের খেলা নেই, নৌকা নেই, শরীর চর্চা নেই, হাঁটা নেই-পাথরের মতো নির্জীব, নিষ্প্রাণ ওরা। দুর্ভাগ্য ওদের ! ওদের আছে শুধু পড়া, মোবাইল টেপা, ফেসবুক দেখা। অলস জীবন ওদের।

যাই হোক, ইউনিয়নের রাস্তাগুলো ছিল শুধুই কাঁচা। বর্ষার সময় কাদা, বন্যার সময় রাস্তার উপর পানি আর শুকনার সময় ধুলাবালি। সেই সময় প্রতি বছর কাঁচা মাটির কাজ হতো। আমরা মজা করে নতুন রাস্তায় হাঁটতাম। নতুন উঁচু রাস্তার উপর দিয়ে হাঁটার সময় সেই শিশু-কিশোর বয়সে অন্যরকম একটা অনুভূতি কাজ করতো। চাচা মোহাম্মদ আলী মেম্বারের প্রতি শ্রদ্ধায়, ভালোবাসায় আবেগে আপ্লুত হতাম নতুন রাস্তা পেয়ে। আমাদের কয়েকজন সম্মানিত চেয়ারম্যানদের সুদক্ষ পরিচালনায় ইউনিয়ন পরিষদের সকল রাস্তা-ঘাট, মসজিদ, মন্দির, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসার কাজ এগিয়ে চললো। ১৯৭১ পূর্ববর্তী কাল থেকে শুরু করে আজ অবধি উচ্চ শিক্ষিত, মার্জিত ও যোগ্য চেয়ারম্যানদের পদচারণায় মুখরিত ছিল ইউনিয়ন পরিষদ। তাই তাদের পদচারণায় সভ্যতার আলোকচ্ছটা ছড়িয়ে পড়লো সমগ্র ইউনিয়নে। ইতিমধ্যে আফড়ায় একটি আলিম মাদ্রাসা, বাড়াইজুড়িতে দাখিল মাদ্রাসা, বাবুপুরে কছিম উদ্দিন বিদ্যাপীঠ এবং চন্দনী বাসস্ট্যান্ডের নিকট রাজিয়া বেগম স্কুল ও বি.এম কলেজ প্রতিষ্ঠা হলো। হাট-বাজারের উন্নতি হলো। সভ্যতার দরজা দিয়ে হাঁটি হাঁটি পা পা করে ইউনিয়নবাসী অগ্রসর হচ্ছে। তবে আন্তরিকতায় এবং মানবিকতায় আমরা প্রবীণদের চেয়ে পিছনে পড়ে আছি।

সামনে আসছে ইউপি নির্বাচন। জনগণ তাদের অবাধ ভোটাধিকার প্রয়োগ করবে। শোনা যাচ্ছে এবার চতুর্মুখী নির্বাচন হবে। মানুষের সেবার মাধ্যমে নতুন নেতৃত্বের সৃষ্টি হচ্ছে। প্রবীণ প্রার্থীরাও বসে নেই। সবাই সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছে দলীয় মনোনয়নের জন্য। নবীন ও প্রবীণের সমন্বয়ে প্রাণবন্ত হয়ে উঠুক নির্বাচন। সমৃদ্ধ হোক ইউনিয়ন-এটাই সকলের চাওয়া।

 

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




© All rights reserved  2022 sahasisamoy
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
error: Content is protected !!